এখনই পাশ–ফেল চালুর ঘোষণা করুন : মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি এসইউসিআই (সি)–র

২৯ মে ২০১৭ বিধানসভার গেটে এ আই ডি এস ও -র বিক্ষোভ

এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৌমেন বসু নিচের চিঠিটি ৪ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে পাঠান

মহাশয়া,

দীর্ঘ ৩৭ বছর প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল প্রথা চালু না থাকার জন্য রাজ্যের কয়েক কোটি অসহায় গরিব পরিবারের ছাত্রের শিক্ষাজীবনে যে চরম সর্বনাশ নেমে এসেছে, একথা আপনার অজানা নয়৷ সরকারি দমন–পীড়নকে অগ্রাহ্য করে সর্বনাশা এই নীতির বিরুদ্ধে অভিভাবক–শিক্ষক–ছাত্রসমাজ লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছেন, একথাও আপনি জানেন৷ এই আন্দোলনের চাপেই সিপিএম সরকার প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি পুনঃপ্রবর্তনে বাধ্য হয়েছিল৷ ইতিমধ্যে ১০ বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল তুলে দিয়েছে৷ ফলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ তীব্রতর হয়৷ এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৭ জুলাই আমরা পাশফেল প্রথা চালুর দাবিতে রাজ্যে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম৷ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আমাদের দাবির সঙ্গে সহমত হওয়ার ও দ্রুত পদক্ষেপের কথা ব্যক্ত করে ১৩ জুলাই অনুরোধ জানান সাধারণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের৷ কিন্তু তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে অথচ আপনাদের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ ৫ মাস পরে গত ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর দপ্তরে শিক্ষাব্রতীদের ও বিভিন্ন দলের প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের এক সভা আহ্বান করেন৷ সেখানে একমাত্র সি পি এম এর শিক্ষক সংগঠন ছাড়া শিক্ষাব্রতী এবং আমাদের দলের প্রভাবিত ও আপনার দলের শিক্ষক সংগঠন সমূহের  নেতৃবৃন্দ  সহ সকলেই এই শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ–ফেল প্রথা চালু করার পক্ষে দৃঢ় মত প্রকাশ করেন৷ তারপরেও এ বিষয়ে কোনও রকম উদ্যোগ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি৷ এই টালবাহানার ফলে শিক্ষার সর্বনাশ ঘটেই চলেছে৷

গতকাল ৩ জুন সংবাদপত্রে আমরা দেখলাম, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বছর সংসদের বাদল অধিবেশনে তারা পাশফেল চালু সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পেশ করবেন৷ তিনি এও জানিয়েছেন, কোন শ্রেণি থেকে পাশফেল চালু হবে সে সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাজ্য সরকারের থাকবে৷ এবং গতকালই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণি থেকে পাশফেল প্রথা চালু করাই নাকি আপনার মত৷ এই সংবাদ আমাদের এবং শিক্ষক–ভিভাবক সমাজকে বিস্মিত করেছে৷

আশা করি, রাজ্যের সর্বস্তরের শিক্ষাব্রতী, শিক্ষক, অভিভাবকের উদ্বেগ এবং মতামতের যথাযথ মূল্য দিয়ে আপনার সরকারের পক্ষ থেকে আপনি শিক্ষার বনিয়াদকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে না দিয়ে অবিলম্বে প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ–ফেল প্রথা চালু করার কথা ঘোষণা করবেন৷

(৭০ বর্ষ ৪২ সংখ্যা ৭জুন, ২০১৮)