‘উন্নয়ন’ শব্দটি জনগণের কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে : শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চ


শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চের পক্ষ থেকে ২১ মে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে বুদ্ধিজীবী মঞ্চ যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, বাস্তবে তা একশো ভাগই সত্য প্রমাণিত হয়েছে৷ মঞ্চ বলেছিল, গণতন্ত্রে বিরোধীদেরও ভূমিকা থাকে রাজ্য শাসক দল বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দল বিরোধী শূন্য পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত গড়ার কথা বলছে – তা গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে শুভ নয়৷

আমাদের রাজ্যেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংবাদপত্রের সমীক্ষা অনুযায়ী শতকরা ৩৪ ভাগ ক্ষেত্রে অর্থাৎ ২০ হাজার আসনে নির্বাচন হয়নি৷ ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগই পায়নি৷ নির্বাচনের মনোনয়নপর্বে ১৭ জন এবং নির্বাচনের দিন ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন৷ বেশ কিছু পরিবার গৃহহীন হয়েছে৷ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেখা গিয়েছে অবাধে ভোট লুণ্ঠিত হয়েছে৷ নির্বাচনে ভোট কীভাবে হয়েছে এবং কীভাবে গণনা হয়েছে তাও সংবাদমাধ্যম মারফত মানুষ দেখেছেন৷ এভাবে নির্বাচন করার দায়িত্ব কার? নির্বাচন কমিশন, শাসক দল, প্রশাসক, আমলাকূল, ছোট আদালত, বড় আদালত?– এ নিয়ে নিশ্চয়ই আগামী দিনেও আলোচনা হবে৷

তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত মানুষ, যারা সকলেই দরিদ্র পরিবারের, নিহত হলেন বা গুরুতর আহত হলেন, গৃহহীন হলেন, তাদের দায়িত্ব কে নেবে? অবশ্যই এর দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারকে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ তাদেরই দিতে হবে, যদিও কোনও ক্ষতিপূরণই মৃতদের ফিরিয়ে দিতে পারে না৷

গ্রামীণ সমাজে গণতন্ত্রের বিস্তৃতি এবং সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের জন্যই প্রয়োজন মানুষের সহযোগিতা৷ কিন্তু বর্তমানে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ‘উন্নয়ন’ শব্দটি শাসকদল ছাড়া অন্যদের কাছে একটা ভয়ঙ্কর ভয়াল রূপ ধারণ করেছে, একে ‘গান–পয়েন্ট’ রাজনীতির সমতুল বলা চলে৷

আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করছি এ রাজ্যের শাসকদল সহ কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে আধিপত্যবাদী মানসিকতা, দুর্বৃত্ত ও দুষৃক্তীদের রাজনৈতিক দলে প্রবেশ ও নেতৃত্বদান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়৷ এই রাজ্যের নির্বাচনে সন্ত্রাস অতীতেও কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে এবং রাজনৈতিক জীবনে ছিল, গণতান্ত্রিক মানুষ এই কারণেই পালাবদল ঘটিয়েছে৷ বর্তমান পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা ঘটেছে তাতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সকলে আশাহত হয়েছেন৷ সরকার ও শাসকদলের প্রতিশ্রুতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত৷ পশ্চিমবঙ্গবাসী দেশের সামনে নির্বাচনী এই চালচিত্রের জন্য লজ্জিত হচ্ছেন৷ অপরদিকে যে অপশক্তি জাত–পাত–ধর্মকে ভিত্তি করে দেশের সংবিধান ও তার মৌলিক রীতিনীতিগুলিকে ধ্বংস করতে চাইছে এ জাতীয় ঘটনা শুধুমাত্র তাদেরই শক্তি জোগাবে৷ গণতন্ত্রকামী মানুষ কখনওই এটা মেনে নিতে পারে না৷

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন,

বিভাস চক্রবর্তী বিমল চ্যাটার্জী

 

প্রতুল মুখোপাধ্যায়

 

পবিত্র গুপ্ত দিলীপ চক্রবর্তী

 

মীরাতুন নাহার

 

পার্থসারথি সেনগুপ্ত সান্টু গুপ্ত

 

তরুণ মণ্ডল

 

ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় চন্দন সেন

 

অজয় চ্যাটার্জী

 

তরুণকান্তি নস্কর মালবিকা চট্টোপাধ্যায় সুজাত ভদ্র প্রমুখ

 

(৭০ বর্ষ ৪০ সংখ্যা ২৫ মে, ২০১৮)