উত্তরাখণ্ডে ছাত্রবৃত্তির কোটি কোটি টাকা লোপাটে জড়িত বিজেপির প্রভাবশালীরা

বিজেপির নেতাদের দাবি– তাঁরা ‘রামরাজ্য’ গড়বেন। সেই রামরাজ্যের রাজা-উজিররা কেমন মহান চরিত্রের মানুষ হবেন, তার নমুনা সম্প্রতি দেখা গেল উত্তরাখণ্ডের এক ন্যক্কারজনক ঘটনায়।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, উত্তরাখণ্ডে দেড়শোরও বেশি বেসরকারি ও সরকার-পোষিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির নামে বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা লোপাট করে দিয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্ট উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই খাতে রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ৭২০০ কোটি টাকার বড় অংশই জালিয়াতি করে হাপিশ করে দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনে-ডাকাতির সঙ্গে শুধু কলেজ কর্তৃপক্ষ বা ব্যাঙ্ক কর্তারাই নন, যুক্ত রয়েছেন বিজেপিশাসিত এই রাজ্যের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

কীভাবে চলত এই আত্মসাৎ যজ্ঞ? কলেজ কর্তৃপক্ষ তফসিলি ছাত্র হিসেবে ভুয়ো নাম নথিভুক্ত করে তাদের নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলত। তারপর সেই অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যেত সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া টিউশন ফি-র একটা বিরাট অংশ। এই ভুয়ো ছাত্রদের কেউ ঠিকা মজদুর, কেউ বা রিকশাচালক। অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড হাতিয়ে নিয়ে যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে, বুঝতে অসুবিধা হয় না, তারা অবশ্যই যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং শাসক দলের কেষ্টবিষ্টু। জালিয়াতির মাথা হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা ও তাদের পরিজনরা। দেরাদুনের ৫৭টি কলেজ ও অন্য ১১টি জেলার ৫৩টি কলেজের মালিক ও কর্মচারী সহ একশোরও বেশি লোকের নাম এফআইআর-এ রয়েছে, যাঁদের মধ্যে আছেন বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিক। বিধানসভার প্রাক্তন এক স্পিকারের কলেজেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগ উঠছে বিজেপির এক বিধায়কের ছেলের বিরুদ্ধেও (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ আগস্ট, ২০২০)। এ হেন বিজেপির স্বপ্নের রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে, দুর্নীতির কাদায় মাখামাখি তার চেহারাটা কেমন হবে, এ ঘটনা থেকেই তা পরিষ্কার। বিজেপি নেতারা বলছেন, ক্ষমতায় এলে তাঁরা নাকি ‘সোনার বাংলা’ গড়ে দেবেন! সোনার গুজরাট গড়া হয়েছে। সোনার উত্তরাখণ্ডের চেহারাও চোখের সামনে প্রকট। ফলে এসব থেকে সেই ‘সোনার বাংলা’ কেমন হতে পারে তার স্পষ্ট পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এই দুর্নীতি আর একটা ‘মিথ’ও ভেঙে দিল। অনেকেরই ধারণা, সরাসরি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে সরকারি টাকা এলে দুর্নীতির সম্ভাবনা কমে। তাদের দুগ্ধপোষ্য প্রমাণ করে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি শাসন দেখিয়ে দিল, দুর্নীতির নতুন নতুন পথ উদ্ভাবন করতে অসাধু দুর্নীতিবাজদের অসুবিধা হয় না।

(ডিজিটাল গণদাবী-১৫_২০ আগস্ট, ২০২০)