উচ্চ মাধ্যমিকে হিন্দিতে প্রশ্নপত্রের দাবি আদায় দীর্ঘ আন্দোলনের জয়

সম্প্রতি উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত হিন্দিতে প্রশ্নপত্র দেওয়ার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে এ রাজ্যের সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গে ১৯৯৩–’৯৪ সাল থেকে হিন্দি ও উর্দু ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এআইডিএসও–র উদ্যোগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজির সাথে মাতৃভাষাতেও প্রশ্নপত্র দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়৷ ’৯৪–এর ২২ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিকেল কলেজের অডিটোরিয়ামে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্তরের বুদ্ধিজীবী–শিক্ষক–ছাত্র এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে এক শিক্ষা কনভেনশন হয়৷ এই কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট অধ্যাপক ডঃ কৃষ্ণবিহারী, ডঃ নারায়ণ উপাধ্যায় প্রমুখ৷ এই কনভেনশন থেকে গঠিত হয় ‘পশ্চিমবঙ্গাল ছাত্র সংঘর্ষ কমিটি’৷

তৎকালীন সিপিএম–ফ্রন্ট সরকার নানা অজুহাত তুলে হিন্দিতে প্রশ্নপত্র দিতে অস্বীকার করে৷ প্রতিবাদে একের পর এক চলতে থাকে ছাত্র–শিক্ষক–অভিভাবকদের মিছিল, বিক্ষোভ ইত্যাদি৷ আন্দোলনের চাপে ২০০৭ সালে মাধ্যমিকে হিন্দিতে প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার৷ বাকি দাবিগুলি অপূরিত থাকে, ফলে আন্দোলন অব্যাহত থাকে৷ ইতিমধ্যে রাজ্যে সরকারের বদল হয়েছে৷ কিন্তু এই সরকারও টালবাহান করে সময় কাটিয়েছে৷ ফলে আন্দোলনও চলেছে৷ অবশেষে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারও দীর্ঘ ছয় বছর পর উচ্চমাধ্যমিকে হিন্দি ভাষায় প্রশ্নপত্রের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হল৷ দীর্ঘ টালবাহানায় ক্ষতি হল একটা বিরাট অংশের ছাত্রছাত্রীদের৷

আন্দোলনের এই জয় উপলক্ষে এবং উচ্চশিক্ষায় হিন্দিতে পঠন–পাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা, প্রতিটি কলেজে হিন্দি বিভাগ খোলা, হিন্দি–মাধ্যম স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় হিন্দিভাষী শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি দাবিতে ৬ জানুয়ারি ছাত্র সংঘর্ষ কমিটির উদ্যোগে কলকাতার রানি রাসমণি হাইস্কুলে এক শিক্ষা কনভেনশন হয়৷ কনভেনশনে স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক–অধ্যাপক–শিক্ষক-শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক এবং অভিভাবকেরা অংশগ্রহণ করেন৷ প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কবি ধ্রুবদেও মিশ্র পাষাণ৷ প্রধান বক্তা ছিলেন কমিটির উপদেষ্টা দেবাশিস রায়৷ সভাপতিত্ব করেন জুবের রব্বানি৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষিকা প্রেম শর্মা, ডাঃ অমরনাথ, সুব্রত গৌড়ী ও ডঃ মৃদুল দাস৷ কমিটির সম্পাদক অবধেশ ভক্ত বলেন, উচ্চক্ষিায় হিন্দিতে পঠন–পাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জনমত সংগঠিত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে৷